এক রাতের গল্প, রুদ্ধশ্বাস সাতটি ঘন্টার গল্প, মহানগরের বুকে ঘটে যাওয়া একটা দুর্ঘটনা, আর সেই দুর্ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য নানা আয়োজনের ফন্দি-ফিকির নিয়ে পরিচালক আশফাক নিপুণ বানিয়েছেন তার নতুন ওয়েব সিরিজ মহানগর। ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে এই ওয়েব সিরিজটি রিলিজ পেয়েছে গতকাল। বুঝতেই পারছেন প্রিয় দর্শক, আমাদের আজকের আয়োজন মহানগর নিয়ে।

নির্মাতা হিসেবে কতটা নৈপুণ্য দেখাতে পারলেন নিপুন? ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মোশাররফ করিমের অভিষেকটা কেমন হলো? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- দর্শক যে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা সময় নিয়ে মহানগর দেখবেন, সেই সময়ের মূল্যটা উসুল হবে তো? গুজব উঠেছে বাংলাদেশর পুলিশকে ছোট করা হয়েছে এই সিরেজে, নোংরা বাস্তবতাকেও তুলে আনা হয়েছে- এসবের ই বা সত্য মিথ্যা কতটা; ভিডিওজুড়ে থাকছে সেসব প্রশ্নেরই উত্তর। চলুন, শুরু করা যাক থাকুন ভিডিওর শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ....




মহানগর (২০২১) | a hoichoi original ♦
🚭ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।।
🚷নারীপান অসুস্থ মস্তিষ্কের লক্ষণ।।
থানায় সারারাত কাটিয়েছেন? এই প্রথম কোন মুভি বা সিরিজ আমাকে সারারাত থানায় আটকে রাখলো, হইচইর মহানগর ওয়েবসিরিজ শেষ করে ভোরবেলা ঘুমোতে গিয়ে মনে হচ্ছিল সারা শরীর থেকে ভকভক করে সিগারেটের কটু গন্ধ বের হচ্ছে। রাতে ২টার বেশি হয় না, কাল একাধারে ৫টা হয়ে গেল...। ওয়েবসিরিজ বিঞ্জের মজাই এটা, একটা দীর্ঘ সময় চরিত্রদের সাথে থাকা যায়। অথচ এটা মোশারফ করিম সর্বস্ব হতে পারত। বরাবরই তাঁর কাজগুলোতে তাঁকে ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়ে না। যেন সবকিছু তাকে ঘিরে আবর্তিত হয়। এখানেও সে বিরাট গুটিবাজ। তাই বলে বাকিরাও ম্লান হয়ে যায় নি।
ওয়েবসিরিজে মাঝপথে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা আমার সহজাত। অনেকদিন পর এর ব্যতিক্রম হল, দুর্বল দিকগুলো বিরক্তির উদ্রেক করেনি, কখনো সিরিজের ফাঁকে অন্য কাজ করার ইচ্ছা জাগেনি। এই অবিছিন্নিতার মূল কারণ হইচই’র বিজ্ঞাপনহীন প্রচারণা ও স্ট্রিমিং কোয়ালিটি, যে কারণে পূর্বে বাংলাদেশী বেশিরভাগ কন্টেন্ট দেখতেই ব্যাপক ঝক্কি পোহাতে হয়। আরে ভাই, এটা তো গেম অফ থ্রন্স না, যে দেখার জন্য জীবন দিয়ে দিতে হবে। তারপরেও যদি দেখতে এত কাহিনী করতে হয়, ক্যামনে কি?
মহানগর বেশ এঙ্গেইজিং একটা সিরিজ, আমার ধারণা ‘তকদীর’ আর ঢাকা মেট্রোর ভেতরই শেষ এই ব্যাপারটা পেয়েছিলাম, দুটাই হইচই’র। তাই সমসাময়িক বাংলাদেশী কন্টেন্টের স্ট্রিমিং সাইট হিসেবে হইচইকেই এগিয়ে রাখবো।
বাইরের কন্টেন্টে যেখানে সবসময়ে গল্পে এরপর কি হবে, উৎকণ্ঠা থাকে, সেখানে বাংলাদেশী কন্টেন্টে আমি বিশ্বাসযোগ্যতাই দেখতে চাই - যা নির্ভর করে অভিনয়, সংলাপ ও সর্বোপরি পরিবেশ তৈরি করতে পারার উপর। এখানেই কিস্তিমাত করেছে মহানগর- প্রায় “ওয়ান লোকেশান” শো, সিংহভাগ ঘটনাই থানাটিকে কেন্দ্র করে। আর একটা ক্লাব/বার, দুইটা টাইমলাইন, কিছুটা নন-লিনিয়ারভাবে দেখানো, তবে বেশ স্মুথ, কখনো কনফিউজিং লাগেনি। প্রোডাকশান, সিনেমাটোগ্রাফি, সম্পাদনা খাপে খাপ।
এই থানা- ব্যাপারটাই বাংলাদেশী কেনো? কোন দেশের কোন সিরিজেই এতটা সময় জুড়ে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। I was pretty much sold! Kept wondering আচ্ছা থানার ভেতরটা তাহলে এমনই হয়? পর্দার পেছনের গল্প জানতে ইচ্ছা হচ্ছিল, বাংলাদেশের মত জায়গায় কীভাবে সম্ভব হল এসব…
ফরীদি পরবর্তী অধ্যায়ে এক মোশারফ করিমকেই মনে হয়েছে he is a one-man show in this industry. একমাত্র অভিনেতা যে বালছাল প্রজেক্টে কাজ করলেও দেখার মত। আমার কাছে অমিতাভ বচ্চনের মত, একটা x-ফ্যাক্টর। কিন্তু টিভি নাটক পরবর্তী ওয়েব সিরিজ অধ্যায়ে তার বহিঃপ্রকাশ ভালোমত দরকার ছিল। আশফাক নিপুণ সেটাই করে দেখিয়েছেন। মহানগরের পর “ওসি হারুন” এর নাম উঠে আসলো মির্জাপুর, স্যাক্রেড গেমসের পঙ্কজ ত্রিপাঠি, নাওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীদের পাশে। ওই কাতারের চরিত্র। আচ্ছা, সংলাপগুলো কি উনি নিজেও লেখেন?
মহানগর একাধারে দুই যুবকের তকদীরেরও গল্প- একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তির বখাটে ছেলে, আরেকজন চাকরিজীবী সাধারণ ঘরের যুবক, যার জোর বান্ধবীকে নিয়ে ক্লাব থেকে বের হয়ে গাড়িতে ঘোরা পর্যন্তই। তবে মহানগরের পুলিশের হাতে পড়লে থানা ঘুরে আসতে হয় দুজনকেই।
শহরটির এই ডার্ক সাইড কারো অজানা নয়, we know what goes on. প্রতিদিনের তাজা জ্বালাময়ী খবরের একটা চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে। নতুন কিছু না। তারপরও আমাকে সারপ্রাইজ করেছে সবার অভিনয় ও atmosphere। বেশ কিছু চরিত্র থাকলেও সবাই স্বতন্ত্র, কেউ কারো চেয়ে কম না, বিশেষ করে ‘মলয়দা’। এই অভিনেতাকে শুরু থেকেই নজর কেড়েছে। সত্যি সত্যি পুলিশ না তো? দিল্লী ক্রাইম, স্যাক্রেড গেমস, পাতাল লোকে পার্শ্ব চরিত্রে এমন অভিনেতাদের দেখেছি, যারা তারকা না হয়েও দারুণভাবে ছাপ ছেড়ে গেছেন। প্রতিষ্ঠানের hierarchy অনুসারে আচারআচরণে ভিন্নতা দেখানোটা সফল। এসপি শাহানার ভূমিকায় জাকিয়া বারি মমকে সবাই ম্যাডাম না বলে “স্যার... স্যার” করছে- এমনটা আগে কখনো দেখিনি। মম-মোশারফ আর মলয় - এই ৩জনের ডাইন্যামিক, আবার প্রত্যেকের সাথে থানায় ওই দুই যুবকের ডাইন্যামিক আনন্দ দিয়েছে। শ্যামল মওলার কথাও নতুন করে বলতে ইচ্ছা করে না, আমার কাছে কন্ট্র্যাক্টের জেফ্রি বেগ এখানেও একইরকম অনস্ক্রিন চার্মকে কাজে লাগিয়েছেন তার অভিনয় দক্ষতার সাথে। মোশারফ আর শ্যামলের দৃশ্যগুলো সিরিজের হাইলাইট হয়ে থাকবে।
ক্রাইম (মিস্ট্রি) ড্রামা হিসেবে দারুণ এই কাজেও কিছু সমস্যা ছিল। থানায় রঙ তামাশা দেখে মজা নেয়া চরিত্রটা পরিস্থিতির সিরিয়াসনেস লঘু করেছে, Comic relief এর ব্যবহার আজকাল কমে গেছে, সেখানে আলাদা করে ওই দৃশ্যগুলোর এত স্ক্রিনটাইম এর মানে হয় না , ভারতীয় কন্টেন্টে এটা এখন বিলুপ্তপ্রায়, বাংলাদেশী নির্মাতারাও এটা থেকে জলদি মুভ অন করলে খুশি হবো। অভিনয় নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই, চটক হিসেবে ব্যবহার না করে সিরিয়াস ড্রামাতেই তাকে রাখা যেত, সাথে আবহ সঙ্গীতের ওই “টোয়্যাইং” টাও বিরক্তিকর। কন্টেন্টের মান বাড়ার সাথে সাথে পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরতে আবহ সঙ্গিতের উপর নির্ভরশীলতাও কমিয়ে দেয়া উচিত। ওই ‘টোয়্যাইং’ তো পুরান সস্তা টিভি নাটক কালচার। এটাকে সাথে নিয়ে চলা কেন?
এছাড়া চিত্রনাট্যে আমার কিছু ছোটখাটো খটকা আছে, সংবাদমাধ্যম এর অভিনয়, সংলাপবলা আনকোরা, এক্ষেত্রে আগের অনেকগুলো কন্টেন্ট মহানগরের চেয়ে ভালো করেছিল। স্লো বার্ন ট্রিটমেন্ট আমার সাথে গেলেও মাঝে গিয়ে কালক্ষেপণ আমারও চোখে লেগেছে। এপিসোড ইন্ট্রো ও এন্ড ক্রেডিটের প্লেইসমেন্টে আরও পাঞ্চ আনা যায়। যদিও ইন্ট্রো মিউজিকটা দারুণ হয়েছে।
কোনও অ্যাকশন নেই, চড় মারা ভায়োলেন্সের মধ্যে পড়লে অতটুকুই। গালিগালাজ থাকলেও বাড়াবাড়ি নেই, চিল্লাপাল্লা নেই। খুব গোছানো well-researched সাহসী কাজ। বার্তা প্রকাশে দর্শকের মুখে তুলে খাইয়ে দেয়া প্রবণতা সীমিত। বহুত শান্তি লেগেছে ব্যাপারটা নেই বলে।
ভালো স্ট্রিমিং, ভালো সাবটাইটেল, কারিগরি যত দিক, সংলাপ, অভিনয় ও পরিবেশ তৈরিতে সক্ষম হওয়ায় আমার কাছে এটা বাংলাদেশের সেরা ৫ ওয়েব সিরিজগুলোর একটা, কলকাতার প্রচুর ইউটিউব চ্যানেল ভূয়সী প্রশংসা করেছে।
এখনও প্রচুর উন্নতির জায়গা ছিল, যা হয়েছে তা নিয়ে গণমাধ্যমের উপর চোখ থাকবে।
পুলিশি ক্রাইম ঘরানায় একটা বার সেট হয়ে গেল মনে হয়।
দেরি হলেও আরও বেশি যত্ন নিয়ে এটার দ্বিতীয় সিজন আসুক।
#ওয়েবসিরিজ #টিভিসিরিজ #রিভিউ #অভীজিবরান #hoichoi

সোর্স: Trendz Now
সোর্স: Facebook