আজকের আলোচনার বিষয় বিজনেস পেইজটি কিভাবে প্রফেশনাল সাঝাবেন।
➡️ চলুন জেনে নেই ফেইসবুকের নতুন আপডেট অনুযায়ী আপনার ফেইসবুক বিজনেস পেইজটি কিভাবে প্রফেশনালি সাজানো উচিতঃ
কঠিন বাস্তবতা হলো প্রতিবছর যে পরিমাণ উদ্যোক্তা অনলাইন বিজনেস শুরু করেন তার ১০০ ভাগের ৯০ ভাগই প্রথম বছরের মধ্যেই ঝরে পড়ে।
একটা আশার কথা হলো আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই ফেইসবুক ভিত্তিক অনলাইন বিজনেসের সংখ্যা বেড়ে চলেছে,
কিন্তু বেড়ে চলার মাঝে টিকে থাকার চেয়ে বর্তমানে এই ঝরে পড়ার প্রধান কারণটাই বলা যায় সঠিক পরিকল্পনা এবং জ্ঞানের অভাব। এই সেক্টরে এখন প্রচুর প্রতিযোগীতা বেড়েছে এখন আর আগের মতো কোনোভাবে শুরু করেই সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বর্তমানে ফেইসবুকের তথ্যমতে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ্য মানুষ অনলাইন বিজনেসের সাথে জড়িত। একটা সময় ছিলো ২০১৫ -১৬ সালের দিকে যখন খুব কম পরিমাণ মানুষ অনলাইন বিজনেস করতো সংখ্যাটা হাজার ত্রিশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো কিন্তু এখন ২০২১ সাল প্রায় শেষ, বর্তমানে একটা বিশাল সংখ্যা ফেইচবুক বিজনেসে এগিয়ে আসছে, এই সংখ্যার একটা সহজ স্বাভাবিক মানে হলো এই সেক্টরে এখন বেশ ভালো ধরণের প্রতিযোগীতা রয়েছে।
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন সেলার বেড়েছেতো কী হয়েছে ক্রেতার সংখ্যাওতো বাড়ছে নিয়মিত, প্রচুর পরিমাণে মানুষ এখন অনলাইনে কেনাকাটা করছে এবং দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে, তাহলে সমস্যাটা কোথায়⁉️
➡️ চলুন ছোট করে জেনে নেই প্রফেশনাল পেইজ সেটআপের প্রয়োজনীয়তা কোথায়-
আপনাকে যদি কখনো কোনো অচেনা জায়গায় ৩ টা রেস্টুরেন্টের মধ্য থেকে খাবার গ্রহণের জন্য যেকোনো একটাকে বেছে নিতে বলা হয়, যেগুলোর একটারও খাবারের মান আপনার জানা নেই তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনি সেটাই বেছে নিবেন যেটার ডেকোরেশন সবচেয়ে বেশি রুচিশীল এবং সুন্দর।
আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়েই বিজনেস করেননা কেন সে প্রোডাক্ট নিয়ে আপনি ছাড়াও আরো অনেকে বিজনেস করছে তারা হয়তো বেশ আগে থেকেই শুরু করেছে তাদের মানুষ চেনে, তাহলে মানুষ কেন তাদের রেখে আপনার কাছ থেকে ক্রয় করবে?
যদি আপনি আপনার বিজনেস এর প্রতি যথেষ্ট প্রফেশনাল না হন। আর যেহেতু ফেইসবুক ভিত্তিক বিজনেস করছেন সেহেতু আপনার ফেইসবুক বিজনেস পেইজ দেখে যদি যথেষ্ট প্রফেশনাল মনে না হয়, সেক্ষেত্রে ক্রেতারা আপনাকে রেখে আপনার প্রতিযোগীর কাছ থেকে পন্য ক্রয় করবে এটাইতো স্বাভাবিক।
আর নতুন ক্রেতারাও ঠিক এভাবেই আপনার ফেইসবুক বিজনেস পেইজটার আউটলুক কতটা প্রফেশনাল তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয় আপনার থেকে ক্রয় করবে কী করবেনা, কারন সে আপনার পন্যের মান সম্পর্কে জানেনা।
তাছাড়া অনলাইনেতো নিয়মিতই প্রতারণার হার বাড়ছে, তাই ক্রেতারা অনেক ক্ষেত্রেই নতুন বিজনেস থেকে অর্ডার করার ক্ষেত্রে আস্থা রাখতে পারেনা যদিনা তাদের কাছে আপনার বিজনেস পেইজের আউটলুক যথেষ্ট প্রফেশনাল না মনে হয়। ‼️
আপনার প্রোডাক্ট সেল করার জন্য যখন বুস্ট করেন, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতারা অর্ডার করার পূর্বে আপনার পেইজে প্রবেশ করে এবং দেখে তা কতটা প্রফেশনাল, আর এক্ষেত্রে সামান্য ঘাটতিও আপনার ক্রেতা হারানোর কারণ হতে পারে, কারণ কেউই চাইনা প্রতারণার শিকার হতে। তাই নতুন ক্রেতার আস্থা অর্জন এবং চরম প্রতিযোগীতাপূর্ণ এই মার্কেটে সফল্ভাবে টিকে থাকতে আপনার প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত আপনার ফেইসবুক বিজনেস পেইজটিকে প্রফেশনালি সাজিয়ে নেয়া। ↩️
➡️ কখন একজন নতুন ক্রেতা আপনাকে প্রতারক মনে করবে না☑️
ফেইসবুক বিজনেস পেইজের আউটলুককে প্রফেশনাল করার জন্য এর প্রত্যেকটা অপশন এবং ফিচারের দিকে নজর দেয়া উচিত নিচে একে একে সবগুলোই আলোচনা করা হলো।
1️⃣ পেইজ নেম/ ব্র্যান্ড নেমঃ
আপনি যদি এখনো বিজনেস শুরু না করে থাকেন অর্থাৎ শুরু করার কথা ভাবছেন তাহলে আপনার উচিত আপনার বিজনেসের জন্য একটা প্রফেশনাল নেম সিলেক্ট করা। আর যারা ইতিমধ্যে শুরু করেছেন বা মাত্র অল্পকিছুদিন হয়েছে শুরু করেছেন তারাও একটু এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করুন যে আপনার নামটা আসলেই প্রফেশনাল কীনা। তো আসুন সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক একটা প্রফেশনাল নেম কীভাবে সিলেক্ট করতে পারেন সে বিষয়টা।
➡️ এমন নেম সিলেক্ট করুন যেটার বানান এবং উচ্চারণ সহজ।
➡️ অনন্য একটি নেম সিলেক্ট করুন যেন অন্য কারো সঙ্গে মিলে না যায়।
➡️ এমন নেম সিলেক্ট করুন যেটার ডোমেইন এভেইলএবল রয়েছে।
আসলে দিনশেষে আপনার বিজনেসের নেমটাই সবজায়গায় আপনার বিজনেসকে রিপ্রেজেন্ট করবে এবং ব্র্যান্ডিং এর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে তাই এই ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করুণ প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন।
2️⃣ প্রফেশনাল কভার ফটোঃ
আপনার ফেইসবুক পেইজে যদি কেউ প্রবেশ করে তাহলে প্রথমেই যেটা দেখতে পাবে সেটা হলো পেইজের কভার ফটো। এই কভার ফটোই ক্রেতাদের একটা সূক্ষ মেসেজ দেয় সেটা হলো এই বিজনেস পেইজটা কতটা প্রফেশনাল। বলতে গেলে এই কভার ফটোই নতুন ক্রেতার মনে আপনার বিজনেস সম্পর্কে ফার্স্ট ইম্প্রেশন তৈরি করে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের বেশিরভাগ উদ্যোক্তার পেইজেই দেখা যায়, হয় কোন জায়গা থেকে একটা ছবি ডাউনলোড করে এনে দিয়ে দিয়েছে অথবা নিজেরই কোনো একটা প্রোডাক্টের ছবি কভার ফটোতে দিয়ে রেখেছে যেটা সাইজ অপ্টিমাইজড না হওয়ার কারণে কেটে গিয়েছে। কিন্তু কভার ফটো হওয়া উচিত এমন যেটা কোনো একটা মেসেজ বহন করবে আপনার পেইজ সম্পর্কে এবং কভার ফটো হবে সাইজ অপটিমাইজড যা মোবাইল এবং কম্পিউটার কোথাও এমনভাবে কেটে যাবেনা যেটা দেখতে খারাপ দেখায়।
আর ক্রেতা যেহেতু পেইজে ঢুকেই প্রথমে কভার ফটোটা দেখতে পায় তাই তার ইম্প্রেশন যেন নষ্ট নাহয় এজন্য প্রফেশনাল কভার ফটো ডিজাইন করে নিন, এক্ষেত্রে নিজে না পারলে প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিন এ ব্যাপারে।
3️⃣ প্রফেশনাল লোগোঃ
সম্ভাব্য ক্রেতারা যখন কোন কিছু অর্ডারের জন্য আপনার পেইজে প্রবেশ করবে তখন প্রথম দিকেই তাদের চোখে আপনার লোগো পড়বে, কারোন পেইজের প্রোফাইল ফটো এর জায়গায় বিজনেসের লোগো ব্যবহার করা উচিত।
কিন্তু অনেককেই দেখা যায় পেইজের প্রোফাইল ফটো এর জায়গায় লোগো না দিয়ে কোনো একটি ছবি দিয়ে রেখেছেন যেটা খুবই আনপ্রফেশনাল। আবার অনেকে লোগো ইউজ করলেও দেখা যায় সেটা খুবই ঝাপসা অথবা অনলাইনের কোনো জায়গা থেকে ডাউনলোড করা এবং এই ধরণের লোগো ক্রেতাদের মনে আপনার বিজনেস সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে দেয় ।
তাই অন্তত ক্রেতা হারাতে না চাইলে নিজের বিজনেসের জন্য একটি প্রফেশনাল লোগো ডিজাইন করে নিন, প্রয়োজনে এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিন।
4️⃣ পেইজ ইনফো সেকশন ফিলআপঃ
পেইজ ইনফো সেকশনে ফেইসবুক মূলত আপনার পেইজ সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য নেয়, যেগুলো ফেইসবুক নরমাল ইউজারদের শো করে যারাই পেইজ ভিজিট করে তাদের সবাইকে এই তথ্য দেখানো হয়। তো নিচে এবার আলোচনা করা হলো এই সেকশনে কোন কোন তথ্যগুলো দিতে হবে, তবে এই সেকশনের তথ্যগুলো পূরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছুটা কী-ওয়ার্ড রিসার্চ করে করা উচিত, কারণ এখানে দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে ফেইসবুক নরমাল ইউজারদের সাজেস্ট করে। তাই অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিয়ে পেইজ ইনফো সেকশনের নিচের ফিল্ডগুলো ফিলআপ করে নিন।
ক। ইউজার নেম
খ। পেইজ ক্যাটাগরি
গ। শর্ট ডেসক্রিপশন
ঘ। এডিশনাল ইনফর্মেশন
ঙ। প্রোডাক্টসঃ
চ। অন্যান্য তথ্যসমূহঃ উপরের তথ্যগুলো ছাড়াও পেইজ ইনফো সেকশনে আরো বেশ কিছু তথ্য যেমন ফোন নাম্বার, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, লোকেশন, প্রাইস রেঞ্জ এসব তথ্য দেয়ার সুযোগ রয়েছে।
[বিঃদ্রঃ আগে এটি স্টোরি নামক সেকশনে লিখা হতো কিন্তু বর্তমানে ফেইসবুকের নতুন আপডেটে ২৮ ফেব্রুয়ারির পর থেকে আর স্টোরি সেকশনটি থাকবেনা, তাই নতুন তা এডিশনাল ইনফর্মেশন সেকশনে লিখতে হবে।]
5️⃣ অ্যাপ্রোপ্রিয়াট ট্যামপ্লেট সিলেকশনঃ
ফেইসবুক বিভিন্ন ধরণের অর্গানাইজেশন বা বিজনেসের জন্য বিভিন্ন ধরণের পেইজ ট্যামপ্লেট ইউজ করার সুবিধা রেখেছে। যেমন আপনি যদি ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট সেল করে থাকেন তাহলে আপনি শপিং ট্যমপ্লেট সিলেক্ট করে দিতে পারেন আবার আপনি সার্ভিস সেল করে থাকলে সার্ভিস ট্যামপ্লেট সিলেক্ট করে দিতে পারেন, তাই আপনি আপনার বিজনেসের সাথে রিলেটেড ট্যামপ্লেটটি সিলেক্ট করে দিন।
6️⃣ ট্যাব ডেকোরেশনঃ
আপনি যে ট্যামপ্লেটই সিলেক্ট করেননা কেন আপনি বেশ কিছু ট্যাব পাবেন, যেমনঃ শপ, ফটোজ, ভিডিওজ, লাইভ, রিভিউজ, এবাউট ইত্যাদি। এগুলোর সিরিয়ালকে চাইলেই আগে পরে করা যায়, আপনি আপনার প্রয়জনমতো ট্যাবকে আগে দিয়ে দিন। যেমনঃ আপনি যদি কাস্টমারের রিভিউকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন এবং আগে শো করতে চান সেক্ষেত্রে এই ট্যাবটাকে আগে দিয়ে রাখুন।
7️⃣ শপ সেটআপঃ
ফেইসবুক পেইজের অন্যতম সুবিধাজনক একটি ফিচার হলো শপ। এর মাধ্যমে আপনি আপনার প্রোডাক্টগুলোকে ক্যাটাগরি অনুসারে সুবিন্যস্তভাবে ছবি, নাম, মূল্য এবং বর্ননাসহ ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরতে পারেন। এবং ক্রেতা চাইলেই এখান থেকে ক্লিক করে অর্ডার করতে পারবে। তাই কমার্স ম্যানেজারের সাহায্যে আপনার পেইজের শপ সেটআপ করে নিন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিন কারণ এখানে সামান্য কিছুটা জটিলতা রয়েছে।
8️⃣ ম্যাসেজ সেটিংসঃ
আপনার পেইজে আপনি চাইলে গ্রিটিংস মেসেজ এবং অটো রিপ্লাইয়ের জন্য আপনার ইচ্ছামতো মেসেজ সেট করে নিতে পারেন। যেটা আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার ক্রেতার প্রাথমিক রিপ্লাই প্রদান করবে।
9️⃣ কল টু একশন বাটনঃ
আপনার পেইজে একটা কল টু একশন বাটন সেট করে দিন যেটাতে ক্লিক করেই যে কেউ আপনাকে মেসেজ অথবা কল করতে পারবে, তবে মেসেজের বাটন দেয়াটায় ক্রেতাদের জন্য বেশি সুবিধাজনক, কারণ অনেকেই হুট করে কল না দিয়ে মেসেজ করতেই পছন্দ করেন।
1️⃣0️⃣ স্মার্ট এমাউন্ট ফলোয়ারঃ
আসলে মানুষ সবসময় সেদিকেই বেশি যায় যেদিকে সে অন্য কাউকে যেতে দেখে। আপনার পেইজে যদি লাইক বা ফলোয়ার সংখ্যা খুবই কম হয় মানে দুই হাজারেরও কম হয় তাহলে অনেকক্ষেত্রেই নতুন ক্রেতারা ভয় পায় অর্ডার করতে তাই পেইড প্রমোশন করে হলেও একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ লাইক বা ফলোয়ার বাড়িয়ে নিন।
1️⃣1️⃣ প্রফেশনাল পোস্ট কন্টেন্ট এবং ধারাবাহিকতাঃ
আপনার বিজনেস পেইজ থেকে নিয়মিত প্রফেশনাল পোস্ট কন্টেন্ট আপলোড করুন, কারোন ক্রেতা যদি পেইজে ঢুকে দেখে দীর্ঘদিন আপনার কোনো পোস্ট নেই সেক্ষেত্রে আপনার প্রতি আস্থা নাও পেতে পারে তাই নিয়মিতই প্রফেশনাল কন্টেন্ট আপলোড করুন পেইজে।
যাইহোক আলোচনা আর দীর্ঘ করবোনা আপনি যদি ফেইসবুক ভিত্তিক বিজনেস করতে চান সেক্ষেত্রে নতুন ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে এবং প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে উপরের বিষয়গুলো ফলো করে আপনার ফেইসবুক বিজনেস পেইজ সেটআপ করার কোনো বিকল্প নেই, প্রয়োজনে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিয়ে হলেও বিজনেস পেইজটাকে প্রফেশনাল করে তুলুন।
----------------------------
উপরের নিয়ম গুলো মেনে কে কে পেইজ সেটআপ করেছেন?
আমি ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট, গ্রাফিক্সের সকল সার্ভিস এবং ফেইসবুক বিজনেস পেইজ ডেভলপমেন্ট নিয়ে আপনাদের সাথে আছি।
© Jahirul Islam
0 Comments